রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে সোনালী ব্যাংকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতাড়না চক্রের মূল হোতা ব্যাংক ম্যানেজার ; এ রকমই অভিযোগ উঠেছে বর্তমানে সোনালী ব্যাংক রামেক শাখার ম্যানেজার ও সাবেক সেনানিবাস শাখার ম্যানেজার কাজী আফিফা শারমিন’র বিরুদ্ধে।

জানা যায়, যৌতুক মামলা তুলে নিতে আলিয়া খাতুন (৩০) নামে এক নারী শ্রমিকের ভুয়া আইডি কার্ড দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ওই নারীর স্বামী ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যাংকের চেক দেখিয়ে ৬ লাখ টাকা ধারের নাটক সাজিয়েছে এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছে।

গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ভুক্তভোগী আলিয়া এমনটিই অভিযোগ করেন। আলিয়া নগরীর ডাশমারী এলাকার ইসাহাক আলীর মেয়ে।

আলিয়া খাতুন জানান, ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জেলার নওহাটা বাজার এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে ওবায়দুর রহমান লিটনের সঙ্গে তার বিয়ে হলে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়া হয়। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি আইনের আশ্রয় নিলে পুলিশ অভিযুক্ত লিটনকে গ্রেপ্তার করে। আগে আরো দুজনকে বিয়ে করে লিটন। জেল থেকে বেরিয়ে সে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহবুবা খাতুন ছবিকে সঙ্গে নিয়ে আলিয়াকে এসিড মারার এবং ব্যাংক চেক বা ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়ে অন্তত ৬ মাস জেল খাটানোর হুমকি দেয়।

আলিয়া খাতুন বলেন, হুমকির ঘটনার পরদিনই আরএমপির মতিহার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। তবে গত ১০ জানুয়ারি আমার কাছে ইদ্রিস আলী নামে অচেনা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি লিগ্যাল নোটিস আসে। নোটিসে বলা হয়, আমি নাকি ৬ লাখ টাকা ধার নিয়েছি ইদ্রিস আলীর কাছ থেকে এবং পরিশোধের নিমিত্তে ব্যাংক চেক প্রদান করি তাকে। অথচ ইদ্রিস আলীকে আমি চিনিই না। আর পরিশোধে চেক প্রদান তো দূরের কথা, কোনো ব্যাংকে আমার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। লিগ্যাল নোটিস দেখে হতবাক হয়ে যাই। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ আমার চাচাতো বোন নদী আক্তার রুনাকে জানাই এবং তাকে নিয়ে নোটিসে উল্লিখিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহীর সেনানিবাস শাখায় যাই।

আলিয়ার ভাষ্য, ব্যাংকে গিয়ে ‘মোছা. আলো খাতুন’ নামে আইডি কার্ডে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে তারা জানতে পারেন। তবে সেটি তার সঠিক নাম নয়। আগের আইডি কার্ডে এ নাম থাকলেও তার সঠিক নাম ‘মোছা. আলিয়া খাতুন’। জন্মনিবন্ধন কার্ডে এটিই দেয়া আছে এবং ভুল আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদনও করেছেন। তবে আগের আইডি কার্ড তার স্বামী ছাড়া কারো কাছে নেই। তার স্বামী লিটন ও স্ত্রী মাহবুবা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অ্যাকাউন্ট খুলে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করছে। বিষয়টির সমাধান না করে ব্যাংক কর্মকর্তারা আলিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তার চাচাতো বোন নদী আক্তারকে মারতে উদ্যত হন।

ব্যাংকে সঙ্গে সাথে যাওয়া আলিয়া খতুনের চাচাতো বোন নদী আক্তার বলেন, পারিবারিক ঝামেলা মিটিয়ে নিলে সবকিছু সমাধান হবে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা আমাদের জানান। থানায় গিয়েও পুলিশি সহায়তা পাইনি আমরা। এখন শিশুপুত্র নিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন আলিয়া। তারা ব্যাংক কর্মকর্তা, লিটন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নদী আক্তার আরো বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার শারমিন এই ঘটনার প্রধান। তিনি ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি ভুল হয়েছে বলেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এবং সেই স্বীকারোক্তির ভিডিও ক্লিপ আমাদের কাছে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তের স্বার্থে তদন্ত টিম গত ৯ ফেব্রুয়ারী সোনালী ব্যাংক রাজশাহী সেনানিবাস শাখায় তাদের ডাকা হয়। সেখানে তারা তদন্ত টিমের সাথে কথাও বলেন।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহীর সেনানিবাস শাখার ম্যানেজার এ বি এম ইকবাল হোসেন বলেন, কীভাবে এমনটা হয়েছে তা আমি জানি না। ঘটনাটি আমি যোগদানের আগের। হেড অফিস থেকে এ রকম একটি ঘটনার তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংক রাজশাহী জিএম অফিসের পক্ষ থেকে এজিএম মোর্শেদ ইমাম’কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন জিএম অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সেকেন্দার হোসেন এবং প্রিন্সিপাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হাবিল উদ্দিন।

গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সোনালী ব্যাংক সেনানিবাস শাখায় তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম মোর্শেদ ইমাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ না হলে আমরা কিছু বলতে পারবো না।
অভিযুক্ত ব্যাংক ম্যানেজার কাজী আফিফা শারমিন’কে মুঠোফোনে বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অফিসিয়াল প্রসিডিউর, জানতে হলে অফিসে আসতে হবে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবেদক প্রতিবেদন করা কালে তথ্য সংগ্রহ ও কথা বলার পর বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে ম্যানেজ করার চেষ্টাও করা হয়। অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়া কথা অস্বীকার করলে প্রতিবেদকে ভয় ভিত্তিও দেখানো হয়।